Friday, February 16, 2024

Dating App ব্যবহারে বাংলাদেশি মেয়েদের অভিজ্ঞতা কেমন

SHARE


প্রথমদিকে শুধু ছেলেরা ডেটিং অ্যাপের ব্যবহারকারী হলেও এখন অনেক মেয়েও এগুলো ব্যবহার করছে।

Dating App ব্যবহারে বাংলাদেশি মেয়েদের অভিজ্ঞতা কেমন

“টিন্ডার বা বাম্বলে অধিকাংশ ছেলেরা আসলে শারীরিক অন্তরঙ্গতা চায়। তাদের সাথে কথা বলা শুরু করতে না করতেই তাদের আল্টিমেট প্রশ্ন হলো, ডু ইউ ওয়ান্ট টু মিট মি?”

ডেটিং অ্যাপ বাম্বল ব্যবহার করার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন সদ্য স্নাতক শেষ করা রাজধানীর ফার্মগেটের বাসিন্দা রুবিনা হক (ছদ্মনাম)।

উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর ধরে ডেটিং অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে। প্রথমদিকে শুধু ছেলেরা এর ব্যবহারকারী হলেও এখন অনেক মেয়েও এগুলো ব্যবহার করছে।

কিন্তু এগুলোর ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশের ছেলে ও মেয়েদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

‘ক্যাজুয়াল ডেটের জন্য ডেটিং অ্যাপ ভালো’

বন্ধুদের উৎসাহে ডেটিং অ্যাপ বাম্বলে অ্যাকাউন্ট খুললেও শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক সঙ্গী খুঁজে পাননি মিজ রুবিনা।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমার কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। তারা ইমোশনাল ইন্টিমেসির ওপর ওয়ার্ক করার চেয়ে ফিজিক্যাল ইন্টিমেসি বেশি চাচ্ছিলো। বিষয়টা ভালো লাগেনি আমার।”

“যারা ক্যাজুয়াল ডেটিং পছন্দ করে, ওদের জন্য ডেটিং অ্যাপ ভালো। দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে তারা কারও না কারও সঙ্গে ডেটে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে কোনও ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট থাকছে না।”

সিরিয়াস রিলেশনশিপের জন্য ডেটিং অ্যাপের ওপর নির্ভর করা উচিৎ না বলে মনে করেন তিনি।

Watch now

“আমি মাত্র দু’জনকে পেয়েছিলাম। তাদের মাঝে একজনের সাথে ছয় মাস কথা বলেছি। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত টিকেনি। কারণ আমি সিরিয়াস রিলেশনশিপ চাচ্ছিলাম, ও চাচ্ছিলো না।”

“দীর্ঘদিন কথা বলার কারণে আমার ওকে ভালো লেগেছিলো। বাট হি ওয়াজ অলসো লুকিং ফর আদার উইমেন। তখন মনে হলো যে এই ধরনের একজন ব্যক্তির সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চাই না।”

এই তরুণীর পর্যবেক্ষণ হলো, ডেটিং অ্যাপগুলোতে যাদের বয়স ৩০ বছরের কম, তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য হলো শারীরিক অন্তরঙ্গতা। আর যাদের বয়স ত্রিশের বেশি, তারা আবার বিয়ের জন্য মেয়ে খোঁজেন।

এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহেরুন নাহার মেঘলাও।

কৌতুহলবশত ২০১৭ সালের দিকে বন্ধুদের সাথে মিলে টিন্ডারে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তিনি। তখন তার সাথে অনেকের সঙ্গে চ্যাটিং হলেও দেখা হয়েছে মাত্র দুই থেকে তিনজনের।

তাদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক না হলেও একটা ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়েছিলো মিজ মেঘলার।

তার মতে, “বাংলাদেশের মানুষ ডেটিং অ্যাপের কনসেপ্টটাই বুঝে না। এখানে তো বলাই আছে যে এটা একটা হুক-আপ অ্যাপ, ক্যাজুয়াল ডেটের জন্য। কিন্তু মানুষ ভাবে এটা বিয়ে করার অ্যাপ।”

“সবাই যে সেক্সের জন্যই টিন্ডার ব্যবহার করে, তা না। তবে হ্যাঁ, টিন্ডারে যদি কেউ সেক্সের প্রপোজাল দেয়, তাহলে সেটাকে অ্যাবনরমাল মনে করার কিছু নাই। কারণ টিন্ডার থেকে সিরিয়াস বা কাটকাট সম্পর্ক আশা করার কিছু নাই", যোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:

Download Now


ছেলেদের দৃষ্টিকোণ কী বলছে

এ বিষয়ে ছেলেদের অভিজ্ঞতা বা দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটা মেয়েদের কাছাকাছি।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমরান হোসেন সর্বপ্রথম টিন্ডারে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন করোনা মহামারির সময়ে, তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

মি. হোসেন বলেন, “কোভিডের সময় চারদিকেই কেমন একটা মনমরা অবস্থা ছিল। তখন লোনলিনেস কাটাতে এমনিতেই টিন্ডারে ঢুকছিলাম। কিন্তু ঢোকার পর আর ভাল্লাগে নাই।”

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এদের প্রত্যেকের কমিনিউকেশন সিস্টেমটাই কেমন যেন। হাই হ্যালো, অর্থাৎ মিনিমাম কনভারসেশনও হতে পারে না। তার আগেই যৌনতার কথাবার্তা শুরু করে দেয়।”

অ্যাকাউন্ট ওপেন করার সাত দিনের মাথায় সাভারের একজনের সাথে কথা হয়েছিলো তার।

“একদিন মাঝরাতে আমায় জিজ্ঞেস করলো যে কী পরে আছো? এটা খুব বিচ্ছিরি লাগছিলো, নরমাল কোনও মানুষ এরকম কথার রিপ্লাই দিতে পারে না। সেদিনই আমি ডিলিট করে দেই ঐ অ্যাপ," বলেন তিনি।

তবে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে অনেকে বিয়েও করেছে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

তবে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে অনেকে বিয়েও করেছে এবং তারা এখন সুখী।

এদিকে ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন মো. ইমরান। তখন তাকে একাডেমিক কারণে ডেটিং অ্যাপের ওপর একটি গবেষণা করতে হয়।

ঐ সময় তিনি সাতদিনের জন্য টিন্ডার ও ট্যানট্যান ব্যবহার করেছিলেন। তবে শুধু ছেলে হিসেবে না, মেয়ে হিসেবেও।

বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মি. ইমরান বলেন, “ডেটিং অ্যাপগুলো মূল হুক আপ করার জন্যই। ছেলে-মেয়ে সবাই, বিশেষ করে ছেলেরা একধরনের সেক্সুয়াল এ্যাডভান্টেজ নেয়ার জন্য এটা ব্যবহার করে।”

“আমি গবেষণার সময় দেখেছি যে প্রপোজাল ছেলেরাই বেশি দেয়। যেমন, তারা বলে যে ঐ জায়গায় ট্রিপে যাবো। মূল লক্ষ্য, নিজেদের সেক্সুয়াল চাহিদা মিট করা। আবার, যারা বাইসেক্সুয়াল বা হোমোসেক্সুয়াল, তারাও সেক্সুয়াল সম্পর্ক গড়তে চাইতো। এদের অনেকে আবার শুধু নিজেদের চিন্তাভাবনাটুকুই শেয়ার করতে চায়।”

অসতর্ক হলে ‘নিশ্চিত বিপদ’

ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের প্রত্যেকে অবশ্য এটাও বলেছেন, অসতর্ক হলে ডেটিং অ্যাপের কারণে ‘নিশ্চিত বিপদ’ এর মাঝে পড়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, স্ক্রিনের ওপাশের মানুষটা নারী নাকি পুরুষ, ছবি দেখে সেটা যাচাই-বাছাই করার কোনও উপায় নেই।

মিজ মেঘলা এ বিষয়ে বলেন, “এটা সত্য যে টিন্ডারে মানুষজন যৌনতা চায় বেশি। সেইসাথে, অনেক অ্যাকাউন্টে আসল নাম পরিচয় থাকে না। সেক্ষেত্রে কেয়ারফুল থাকা উচিৎ। আমি যখন টিন্ডার চালাতাম, তখন আমার নিজেরই চ্যাটিং-এর এক পর্যায়ে উল্টো পাশের মানুষটাকে ফেইক, মানে মেয়ে বলে মনে হচ্ছিলো।”

আরেকটা ঝুঁকি হলো, ব্যবহারকারীদের অনেকে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবি আদানপ্রদান করে।

এজন্য তারা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে স্ন্যাপচ্যাট। কারণ, স্ন্যাপচ্যাটে পাঠানো কোনও ছবি বা মেসেজ একবার দেখার পর তা অটোমেটিক্যালি ভ্যানিশ হয়ে যায়। এমনকি, কেউ স্ক্রিনশট নিলেও সেটা লেখা থাকে।

তবে এ বিষয়ে মিজ রুবিনার বক্তব্য, “ম্যাক্সিমাম ছেলেরা স্ন্যাপচ্যাটে ইন্টিমেট পিকচার এক্সচেঞ্জ করতে চায়। স্ন্যাপচ্যাটে ছবি দিলে দেখার পর চলে যাবে। কিন্তু তার কাছে যদি আরেকটা ফোন থাকে, তাহলে সে সেটা দিয়ে ছবি তুলে রাখতে পারে।”

“ডেটিং অ্যাপে কথা বলার পর যদি কোনও মেয়ে দেখা না করতে চায়, তাহলে ওরা অনেক পারসোনালি নিয়ে নেয়। আজেবাজে কথা বলে, গালাগালি করে। অনেক ফ্রেন্ডদেরকে আমি ইন্টিমেট ছবির জন্য ব্ল্যাকমেইলড হতেও দেখেছি।”

এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করার পর অনেক মেয়েরা বিপদে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে অপরিচিত জায়গায় দেখা করতে যাওয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ছবি আদানপ্রদান করার ক্ষেত্রে সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করার পর অনেক মেয়েরা বিপদে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে অপরিচিত জায়গায় দেখা করতে যাওয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ছবি আদানপ্রদান করার ক্ষেত্রে সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা।

কী কী ডেটিং অ্যাপ আছে

বাংলাদেশের তরুণ তরুণীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে টিন্ডার। তবে মেয়েদের মাঝে বাম্বল ব্যবহার করার প্রবণতা আবার তুলনামূলকভাবে বেশি।

এছাড়া ট্যানট্যান, হিঞ্জ, ওকেকিউপিড, কফি মিটস বেইগেল, ট্রুলিম্যাডলি, ই-হারমোনি, ম্যাচের মতো আরও অনেক অ্যাপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। যারা সমকামী, তারা বেশি ব্যবহার করে হার কিংবা গ্রাইন্ডার।

তবে টিন্ডার, বাম্বল, ওকেকিউপিডের বেশি জনপ্রিয়। এর কারণ হতে পারে, এগুলো বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।

ইমেইল অ্যাকাউন্ট, টেলিফোন নম্বর, ছবি এবং ব্যক্তিগত তথ্য যোগ করে এসব অ্যাপে নিজস্ব একাউন্ট খোলা যায়।

সেখানে নিজের আগ্রহের, এমনকি শখের বিষয়গুলো উল্লেখ করে দিতে হয়। এছাড়া, নিজের শারীরিক বৈশিষ্ট্য, যেমন- উচ্চতা, গায়ের রং, ওজন ইত্যাদি তথ্যও দেয়া যেতে পারে।

সব তথ্য দেয়া থাকলে ব্যবহারকারীর পছন্দের সঙ্গে মেলে, এমন সঙ্গীর পরামর্শ দেবে অ্যাপগুলো।

এছাড়া, বাম্বল অ্যাপে মেয়েদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এখানে কাউকে পছন্দ হলে মেয়েদের আগে বার্তা পাঠাতে হয়। পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই বার্তার জবাব পাওয়া গেলে সংযোগ বা ম্যাচ তৈরি হয়, না হলে সেটি মুছে যায়।

ডেটিং অ্যাপে প্রাথমিক আলাপচারিতার পরে সাধারণত ব্যবহারকারীরা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট (ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি) বা ফোন নাম্বার আদানপ্রদান করে।

কথাবার্তা বলার পর তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা দেখা করবে কিনা বা সম্পর্ক আগাবে কিনা।

যারা একটু ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের, তাদের অনেকে ডেটিং অ্যাপ থেকে সঙ্গী খুঁজে নিতে চান।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

যারা একটু ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের, তাদের অনেকে ডেটিং অ্যাপ থেকে সঙ্গী খুঁজে নিতে চান।

গবেষণা কী বলছে

বাংলাদেশে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও বিস্তারিত গবেষণা করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারে ২০২৩ সালের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশটির শতকরা ৩০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে।

এদের মাঝে ৩৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ হলো নারী। তবে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মাঝে, তাদের মাঝে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার প্রবণতা সবচেয়ে।

এছাড়া, ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই হয় অবিবাহিত, অথবা ইতোমধ্যে তাদের কোনও না কোনও সঙ্গী আছে। বিবাহিত বা যাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে,তাদের মাঝে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার প্রবণতা কম।

এই গবেষণা আরও বলছে, বিপরীতলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্টদের চেয়ে যারা সমকামী বা উভকামী; তাদের মধ্যে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার হার অনেকটাই বেশি।

এখানে আরও উঠে এসেছে যে ৪৪ শতাংশ ব্যবহারকারী লং-টার্ম সম্পর্ক গড়ার জন্য এবং ৪০ শতাংশ ক্যাজুয়াল ডেটের জন্য ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে। মাত্র ২৪ শতাংশ ক্যাজুয়াল সেক্সের জন্য এগুলো ব্যবহার করে। অনেকে আবার নতুন বন্ধু বানানোর জন্যও ডেটিং অ্যাপকে বেছে নেয়। তবে এই সবগুলো ক্যাটাগরিতেই নারীদের হার বেশি।

এই গবেষণায় আরও বলছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬ শতাংশ নারী ব্যবহারকারী বলেছে যে তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বা না চাওয়া সত্ত্বেও ডেটিং অ্যাপে পুরুষদের কাছ থেকে যৌনোদ্দীপক বা হয়রানিমূলকও মেসেজ এবং ছবি পেয়েছেন।

বিশ্বে টিন্ডার ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পিউ রিসার্চ বলছে, ৪৬ শতাংশ।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

বিশ্বে টিন্ডার ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পিউ রিসার্চ বলছে, ৪৬ শতাংশ।

ডেটিং অ্যাপের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণ

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মাঝে অনলাইনবেজড সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রবণতা বেশি।

এর কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, এই প্রজন্মের অনেকে ভালো লাগার কথা সামনাসামনি বলতে হয়তো পছন্দ করে না। এছাড়া, যারা চরিত্রগতভাবে ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী, তারা অনলাইন থেকে সঙ্গী খুঁজে নিতে চায়।

তাছাড়া, সামনাসামনি দেখা করতে গেলে বেশি সময় দিতে হয় বলেও অনেক অনলাইনে সম্পর্ক গড়েন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলেন যে অনেকসময় একাধিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার জন্যও মানুষ এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে।

"একটা সমাজে থেকে একই মানুষ প্রকাশ্যে একাধিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে না। যদি কেউ করে, তাহলে সেটি সোশ্যাল কনসার্ন হয়ে যায়। কিন্তু অনলাইনে এই ঝামেলা নেই। কারণ সেখানে তথ্য লুকানো যায়। এবং, একজন মানুষের একই সাথে কতজনের সাথে সম্পর্ক আছে, সেটি কেউ জানতে পারে না।”

পরিবারের সাথে বন্ধন কমাও ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনকার ছেলেমেয়েরা যেভাবে বড় হয়, তাতে তারা পরিবারের সাথে যুক্ত না। আগে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হতো। কিন্তু এখন বিয়ের কথা বললে বাচ্চারা তাদের বাবা-মাকে বলে, এটা বলার তোমরা কে?”

যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারে ২০২৩ সালের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশটির শতকরা ৩০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারে ২০২৩ সালের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশটির শতকরা ৩০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে।

“সুতরাং, এখনকার বাচ্চাদের সম্পর্কগুলো অনেক বেশি ইন্টারপারসোনাল। তাদের কাছে রিলেশনশপ মানেই সেটা লং টার্ম না, রিলেশনশিপ মানেই বিয়ের সিদ্ধান্ত না।”

তরুণদের এমন মানসিকতার জন্য তিনি পারিপার্শ্বিকতাকে দায়ী করেন। “বাচ্চারা এখন অনেক বেশি স্ট্রেসফুল অবস্থায় বড় হচ্ছে। যেমন, সে তার আশেপাশে প্রচুর ডিভোর্স হতে দেখছে।”

“এগুলো দেখে হয়তো তার মনে হয়, ফ্যামিলি বলে কিছু নাই, কমিটমেন্ট বলে কিছু নাই। এইসব ডিভোর্স, ব্রেকআপের ঘটনাগুলো দ্বারা বাচ্চারা কোথাও একটা গিয়ে ইনফ্লুয়েন্স হচ্ছে।”

তবে এইসব কিছুর মূলে আছে বিশ্বাসহীনতা। অধ্যাপক সালমা বলেন, “এখনকার ছেলেমেয়েদের মাঝে পারস্পরিক বিশ্বাস কমে গেছে। ছেলে মনে করছে, তার পার্টনারের অনেক সম্পর্ক আছে। মেয়েও মনে করছে, আমার পার্টনারের অনেক সম্পর্ক আছে। অথচ, লং টার্ম রিলেশনশিপের ভিত হলো বিশ্বাস।”

এছাড়া, মিডিয়ার ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেন এই সমাজবিজ্ঞানী। তার মতে, বিয়ে বা প্রেম ভেঙ্গে যাওয়া; এগুলোকে মিডিয়াতে এত হালকাভাবে দেখানো হচ্ছে যে তরুণরা এগুলোকে এটাকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরে নিয়ে বড় হচ্ছে।

“রিলেশনশিপ একটা কমোডিটিতে পরিণত হয়েছে। কারও যদি পার্টনার না থাকে, তাহলে তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। ডেটিং অ্যাপের দিকে ঝোঁকার এটাও একটা কারণ,” যোগ করেন তিনি।

চারিদিকে ডিভোর্স বা ব্রেকআপের মতো ঘটনা ঘটায় তরুণরা কমিটেড সম্পর্কে যেতে ভয় পান বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

চারিদিকে ডিভোর্স বা ব্রেকআপের মতো ঘটনা ঘটায় তরুণরা কমিটেড সম্পর্কে যেতে ভয় পান বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

“এগুলো দেখে হয়তো তার মনে হয়, ফ্যামিলি বলে কিছু নাই, কমিটমেন্ট বলে কিছু নাই। এইসব ডিভোর্স, ব্রেকআপের ঘটনাগুলো দ্বারা বাচ্চারা কোথাও একটা গিয়ে ইনফ্লুয়েন্স হচ্ছে।”

তবে এইসব কিছুর মূলে আছে বিশ্বাসহীনতা। অধ্যাপক সালমা বলেন, “এখনকার ছেলেমেয়েদের মাঝে পারস্পরিক বিশ্বাস কমে গেছে। ছেলে মনে করছে, তার পার্টনারের অনেক সম্পর্ক আছে। মেয়েও মনে করছে, আমার পার্টনারের অনেক সম্পর্ক আছে। কিন্তু লং টার্ম রিলেশনশিপে ভিত হলো বিশ্বাস।”

এছাড়া, বর্তমান এই অবস্থার পেছনে মিডিয়ার ভূমিকাকেও প্রশ্ন করেন এই সমাজবিজ্ঞানী। তার মতে, বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া, প্রেম ভেঙ্গে যাওয়া; এগুলোকে মিডিয়াতে এত হালকাভাবে দেখানো হচ্ছে যে তরুণরা এগুলোকে এটাকে স্টান্ডার্ড হিসেবে ধরে নিয়ে বড় হচ্ছে।

“রিলেশনশিপ এখন একটা কমোডিটিতে পরিণত হয়েছে। কারও যদি পার্টনার না থাকে, তাহলে তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। ডেটিং অ্যাপের দিকে ঝোঁকার এটাও একটা কারণ,” বলেন তিনি।

যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মাঝে, তাদের মাঝে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার প্রবণতা সবচেয়ে। সূত্র: পিউ রিসার্চ সেন্টার

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মাঝে, তাদের মাঝে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করার প্রবণতা সবচেয়ে। সূত্র: পিউ রিসার্চ সেন্টার

করণীয় কী?

নানাপ্রকার তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও ডেটিং অ্যাপের জনপ্রিয়তা কমছে না। বরং, গত কয়েক বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সামলাতে হচ্ছে।

ডিবি’র সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. জুনায়েদ আলম সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন যে ডেটিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে মূলত অপহরণের শিকার বেশি হয়।

“আমরা আরও এক দেড় বছর আগে থেকে এই কেসগুলো তদন্ত করছি। দেখা যায়, অ্যাপে পরিচয় হওয়ার পর একটা মেয়ে কারও বাসায় গেছে, যাওয়ার পর তাকে আটকে রেখে বাবা-মায়ের কাছ মুক্তিপণ আদায় করছে।”

এই ঘটনাগুলো এখনও খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না পৌঁছালেও ‘আশেপাশে ঘটছে’ বলে জানান তিনি।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, সরকার থেকে এই বিষয়টিকে শক্তভাবে নজরদারি না করা হলে সমস্যা ক্রমশ বাড়বে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, সরকার থেকে এই বিষয়টিকে শক্তভাবে নজরদারি না করা হলে সমস্যা ক্রমশ বাড়বে।

“আবার সমকামীদের অ্যাপ আছে। সেখান থেকে হত্যাকাণ্ডও হয়েছে। কিছু স্ক্যামিং গ্রুপ আছে, যারা সমকামীদেরই টার্গেট করে। তারা সমকামীদেরকে বাসায় ডাকে। ডেকে ওদের থেকে জিনিসপত্র নিয়ে নেয়। টর্চার করে।"

তিনি ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবাইকে এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।

তবে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির যদিও মনে করেন যে সরকার থেকে এই বিষয়টিকে শক্তভাবে নজরদারি না করা হলে সমস্যা ক্রমশ বাড়বে।

“যদি ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার বলে দেয় যে আমার দেশের এই বয়সের কম নাগরিকদেরকে ডেটিং অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে তোমরা অনুমতি দিতে পারবে না, কেবল তখন সেটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই ট্র্যাপে পড়বে না।"

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা 

SHARE

Author: verified_user

0 $type={blogger}: