পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং আয় লাখ টাকা
কটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে তাঁর আয় প্রায় চার লাখ টাকা। আপওয়ার্কে প্রায় ১০ হাজার ঘণ্টা কাজ করে ৯৮টি প্রজেক্ট শেষ করেছেন। সফল এই ফ্রিল্যান্সারের নাম সৈয়দা নিশাত আরা।
শুরু যেভাবে
২০২০ সালের ঘটনা। নিশাতের বাবা বললেন ফ্রিল্যান্সিং শেখার কথা। কথাটা নিশাতের মনে ধরে। কারণ, কম্পিউটারের টুকটাক কাজ জানতেন তিনি।
দারস্থ হলেন ইউটিউবের। সেখান থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের আরো অনেক কিছু শেখেন তিনি। এ বছরই আগস্ট মাসে ফ্রিল্যান্সিংয়ে তাঁর প্রথম আয় হয় পাঁচ ডলার। আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলার সাত দিনের মাথায় এই আয় করেন তিনি।
গল্প লিখে টাকা আয় | আর্টিকেল লিখে টাকা আয় | Article Write to Earn Money Per Day $50 | Part 01
মা, বাবা, দুই বোন আর এক ভাই নিয়ে নিশাতের পরিবার। বরিশাল শহরে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।ব্যর্থতা সফলতার পথ দেখাল
পড়াশোনার পাশাপাশি যেকোনো একটা স্কিল ডেভেলপ করা জরুরি—এমন ভাবনা নিশাতকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসতে আগ্রহী করে। কিন্তু শুরুটা তাঁর একদমই ভালো যায়নি। একটু পথ দেখানোর জন্য কাছের মানুষরা কত বলেছে।
সাহায্য করেনি কেউ। বরং উল্টো দুকথা শুনিয়ে দিয়েছে। আবার স্ক্যামের কাজ শেষ করেছেন। একটি টাকাও পাননি। এত কিছুর পরও নিশাত দমে যাননি। তিনি তাঁর মতো করে এগিয়ে গেছেন। পেয়েছেন পরিবারের সমর্থন। অন্ধকার শেষে যেমন আলোর দেখা মেলে, তেমনি নিশাতও আলোর দেখা পেয়েছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কথা বলেছেন, যা তাঁর অনন্য অর্জন বলে মনে করেন তিনি। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কতই না ইচ্ছা ছিল তাঁর!
ডাটা এন্ট্রি থেকে শুরু
অফিস অ্যাপ্লিকেশন এবং মাইক্রোসফটের কাজ মোটামুটি পারতেন নিশাত। প্রথম দিকে তিনি পান ডাটা এন্ট্রির কাজ। এরপর ক্লায়েন্টের থেকেই শিখেছেন কাজ। তিনি বলেন, ‘কাজ শিখেছি মূলত ক্লায়েন্টের থেকেই, বেশ ভালো একজন ক্লায়েন্ট পেয়েছিলাম। যাঁর ছোট্ট একটি ডাটা এন্ট্রি প্রজেক্টে ঢুকেছিলাম। পরে আমাকে চাকরি দেন তিনি। এভাবেই কাজ করতে করতে দক্ষ হয়ে ওঠেন নিশাত।
কাজের ফিরিস্তি
নিশাত মূলত কাস্টমার সাপোর্ট রিলেটেড, ড্রপ শিপিং বিজনেসের কাজ বেশি করেন। রাশিয়ার খুব স্বনামধন্য একটি কম্পানি ‘ইন ড্রাইভার’! এই কম্পানির কাস্টমার সাপোর্টে কাজ করছেন দুই বছর ধরে। জানা যায়, ইন ড্রাইভারে একমাত্র নারী বাংলাদেশি হিসেবে নিশাত চাকরি করছেন। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আপওয়ার্কসহ অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে তাঁর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
পাঁচজনের টিম
নিশাত শুধু একাই কাজ করেন না, তাঁর সঙ্গে আরো পাঁচজন আছেন, যাঁদের দিয়ে তিনি কাজ করিয়ে নেন। তাঁদের আয় পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। ‘টেক সাপোর্টিফাই’ নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিশাত দুই ধরনের কাজ করেন। এখান থেকে ক্লায়েন্ট তাদের হায়ার করতে পারে। যোগাযোগ করে তাদের থেকে কাজ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। আবার কেউ কোর্স করতে চাইলে এখানে ভর্তি হতে হয়।
মা-ও ফ্রিল্যান্সার
ফ্রিল্যান্সিংয়ের আলো ছড়াচ্ছেন নিশাত তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে। পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব মাসহ বড় বোন, চাচাতো বোন, খালাতো বোন, খালাতো বোন জামাইসহ ১৫ জনকে তিনি ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর কার্যক্রমে বাদ যাননি তাঁর কাছের বন্ধুরাও। তাঁদের অনেকের মাসিক আয় দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গৃহবধূ মা এখন ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী। অথচ একসময় তিনি কম্পিউটার অন করতেই পারতেন না। এটি নিশাতের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বলে জানান।
আপওয়ার্কে জয়জয়কার
আপওয়ার্কে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে অ্যাকাউন্ড খোলার পর আজ অবধি তিনি ৯৮টি প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছেন। সময়ের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ঘণ্টা কাজ করে আয় করেছেন ষাট হাজারেরও বেশি ডলার। আপওয়ার্ক এবং এর বাইরে সব মিলিয়ে তাঁর মোট আয় প্রায় এক লাখ মার্কিন ডলার। মাসে তাঁর আয় প্রায় চার লাখ টাকা।
সফলতার গোপন সূত্র
অন্য অনেকেই যখন বছরের পর বছর খেটে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পারেন না, সেখানে নিশাত কী এমন কৌশল অবলম্বন করলেন যাতে এত কম সময়ের মধ্যে টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার হলেন। গোপন রহস্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গোপন রহস্য আর কিছুই নয়, পরিশ্রমই হচ্ছে শেষ কথা! স্কিল ডেভেলপ করার পাশাপাশি প্রতিদিনই নিজের কাজটাকে মোডিফাই করে চলছি। নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করেছি। বিগত সাড়ে তিন বছরে ১০ হাজার ঘণ্টারও বেশি কাজ করেছি।’
মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান
পাঁচজনের টিমটা বড় করে একটি এজেন্সি করবেন। এজেন্সির মাধ্যমে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সঠিক প্রশিক্ষণ এবং দিকনির্দেশনা দিতে চান। এভাবে তৈরি হবে হাজার হাজার টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার।
নিশাতের পাঁচ টিপস
ঘর-সংসার সব সামলে ফ্রিল্যান্সিং নারীর জন্য আদর্শ পেশা। ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের মার্কেট অনেক বড়। আয়ও খারাপ নয়। এমনটা মনে করেন নিশাত।
► ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে।
► নিজের দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে।
► অনেক বেশি ধৈর্যের অধিকারী হতে হবে।
► ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলেই লাখ টাকা আয় হবে—এমন ধারণা ঠিক নয়। বরং পরিশ্রম করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে সবার আগে। ব্যর্থ হলেও লেগে থাকার বিকল্প নেই। বেশি ধৈর্য, অনেক বেশি স্কিল এবং অনেক বেশি অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। তবেই ধরা দেবে লাখ টাকা।
► নিজেকে অনেক বেশি কনফিডেন্ট করতে হবে। নিজের জ্ঞান বাড়াতে হবে। জানতে হবে সব কিছুর খুঁটিনাটি। বিভিন্ন ধরনের গ্রুপে সক্রিয় থাকলে বাড়বে জানার সুযোগ।
0 $type={blogger}: